ইশানের কথা / Ishan Speaks
পৌষ সংক্রান্তি
৩০ পৌষ ১৪২৭ / ১৪ জানুয়ারি ২০২১
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। এটা এখন আর উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না। এখন সর্ববিদিত। অন্য বিশেষ উৎসব ছাড়াও প্রতি মাসের শেষ দিনে বাঙালি তথা অধিকাংশ হিন্দুই সংক্রান্তি পালন করে। আর এই সংক্রান্তির মধ্যে মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তি বিশেষ ভাবে পালিত হয়। সংক্রান্তি মানে সঞ্চার বা গমন। তাই সংক্রান্তি মানেই নতুন কিছুর আগমনের আভাস।
কবে থেকে মকর সংক্রান্তি পালন আরম্ভ হয়েছে তার নির্দিষ্ট কোন তারিখ বা তথ্য পাওয়া যায় না। হতে পারে হাজার বারো শ বছর বা তারও আগে থেকে এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। তবে মকর সংক্রান্তির উল্লেখ কিন্তু পুরাণেও আছে। হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ মতে এই সংক্রান্তি উত্তরায়ন সংক্রান্তি হিসেবে বেশি পরিচিত।বিজ্ঞান অনুযায়ী প্রতি বছর 21 ডিসেম্বর সূর্য উত্তরায়ন থেকে দক্ষিণায়নে প্রবেশ করে। আর ঐ দিন থেকে দিন বড় হতে শুরু করে, আর রাত ছোট হতে থাকে।আর শাস্ত্রমতে দেবগণের এক দিন মনুষ্য জাতির ছয় মাসের সমান। দক্ষিণায়নের ছয় মাস, দেবগণের এক রাত। পৌষ সংক্রান্তির দিনে দেবতাদের রাত শেষ হয়। সূর্য দক্ষিণায়ন থেকে উত্তরায়নে প্রবেশ করে। উত্তরায়নের ছয় মাস দেবতাদের দিন। বলা হয়, উত্তরায়নে মৃত্যু হলে মুক্তি প্রাপ্তি হয়, আর দক্ষিণায়নে মৃত্যু হলে পুনরাবৃত্তি হয় বা পুনর্জন্ম হয়। দক্ষিণায়নের সময় কালে স্বর্গদ্বার বন্ধ থাকে। তাই মহাভারতের যুদ্ধের দশম দিনে কৌরবদের চার সেনাপতির অন্যতম গঙ্গা পুত্র ভীষ্ম অর্জুনের দ্বারা শরবিদ্ধ হলেও, মোক্ষ লাভের আশায় উত্তরায়নের জন্য দীর্ঘ আটান্ন দিন শর শয্যায় কাটান এবং ইচ্ছা মৃত্যু বরণ করেন। অন্য মতে, ঐ দিন অসুরদের সাথে দেবতাদের যুদ্ধ শেষ হয়। তাই এই দিনে সমস্ত রকম অশুভ শক্তির বিনাশ হয়ে শুভ শক্তির সূচনা হয় বলে পুরাণে কথিত আছে।সূর্য দেব ঐ দিন পুত্র অর্থাৎ মকর রাশির অধিপতি শনি দেবতার বাড়িতে ঘুরতে গিয়ে ছিলেন। তাই সূর্য ধনু রাশি থেকে মকর রাশিতে প্রবেশ করেন।
শাস্ত্র বা পুরাণ মতে মকর সংক্রান্তির বিভিন্ন মাহাত্ম্য বর্ণনা ছাড়া ও মকর সংক্রান্তির বাস্তব বা সমসাময়িক বিশেষত্ব হলো, এটা একটা ফসল উৎসব।আবহাওয়াগত মিল থাকার দরুন ভারত তথা ভারতীয় উপমহাদেশে এই উৎসব বিভিন্ন নামে প্রচলিত। তাই ভারতের বাঙালিরা বিশেষ করে হিন্দু জনগোষ্ঠীর কাছে যখন এই উৎসব পৌষ বা মকর সংক্রান্তি নামে পরিচিত, বাংলাদেশে তখন সাঁকরাইল বলে পালন করা হয়। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম- ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই সংক্রান্তি পোঙল, মকর ভিলাক্কু, পেড্ডা পান্ডুয়া, কিচেরি, মকর সংক্রমণা, শিশুর সংক্রান্তি ইত্যাদি নামে পরিচিত। এছাড়া মকর সংক্রান্তি নেপালে মাঘি ,থাইল্যান্ডে সংক্রান, মায়ানমারে থিংইয়ান, কম্বোডিয়ায় মহা সংক্রান নামে পালন করা হয়। আসাম বা উত্তর পূর্বাঞ্চলে এই উৎসব মাঘ বিহু হিসেবে পালন করা হয়।
ঘুড়ি ওড়ানো এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ। বলা হয়ে থাকে, ঘুড়ি উড়িয়ে যার যার প্রিয় দেবতার কাছে নিজেদের আশা, আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়। ঈশান কথা'র আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্নের ঘুড়ি ও আকাশে উড়ে চলেছে। মকর সংক্রান্তির এই শুভ অবসরে আমাদের কামনা- সকলের জন্য খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা।
ধন্যবাদ , ভালো থাকুন, আর রোজ পড়তে থাকুন ঈশান কথা ...