সাহিত্য পত্র
বসন্তের আঙ্গিনায় এক গুচ্ছ কবিতা
২১ মার্চ ২০২২
বসন্ত এবং প্রেম নিয়ে বিশ্ব কবিতা দিবসে
এক গুচ্ছ কবিতা নিবেদন করেছেন...
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, উজ্জ্বল দত্ত চৌধুরী, সুশান্ত ভট্টাচার্য, মিতা দাস পুরকায়স্থ, স্মৃতি দাস, পঙ্কজ কান্তি মালাকার,
শর্মী দে, সব্যসাচী রুদ্র গুপ্ত, জয়া ভাওয়াল, ধীমান কুড়ি, গোপাল চক্রবর্তী, রুপালী রায়,
শর্বরী পাল, দীপান্বিতা ভট্টাচার্য, রুবেল দাস,
এবং
সোমালি ভট্টাচার্য ধর
কবি - বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
ভালোবাসাবাসি
দিন রাত একাকার ভালোবাসা ঘোরে
ঘনিয়ে আসে যে মেঘ নীলাকাশ ভরে।
সময় বালাই বড় তবু আসে ফিরে
হৃদয় শুধু যে চায় - এসো বাহুডোরে।
ফারাক যোজন সম - এ কেমন খেলা
অহরহ তার ছবি বেলা অবেলা।
কল্পনা অন্তরে সুখ দিবা নিশি
ক্ষণে ক্ষণে রঙিন ভালোবাসাবাসি।
পায়ে পায়ে পা মিলিয়ে সেই পথ চলা
স্বপ্নিল পথ ধরে কিছু কথা বলা।
এত কাছে এক বেলা সেই তো প্রথম
অন্তরে আলোড়ন স্খলিত কদম।
বেড়িয়েছি উড়ে উড়ে ইচ্ছেডানায়
উঠেছি ভেসে যে পটে একে দু'জনায়।
গোধূলি বেলায় খুঁজি আলো আঁধারিতে
দাঁড়িয়ে ছিলে যে তুমি হতচকিতে।
আশ ছিল অন্তরে - সেই এক বেলা
হয় না যেন সে শেষ মিলন মেলা।
ভরা বসন্তে
তোমার সাথে
দেখা না হলেই ছিল ভালো,
তোমার সাথে
কথা না হলেই ছিল ভালো।
নাহয় ফুলে ফুলে গাছ
উঠতো না ভরে
নাহয় কোকিল দিত না শিস্
ভরা বসন্তে।
নাহয় চলেই যেত জীবন আমার
দূর দিগন্তে সরল রেখায়।
এমন ভর বসন্তে
মন উচাটন যাপন বেলায়
নাই বা হতাম সিক্ত ভালোবাসায়।
নাই বা হতো রাত্রি যাপন
কবিতা সঙ্গমে
সকাল সন্ধে নাই বা হতাম আকুল
জলছবিতে উঠতো না তো ভেসে
নিত্যদিনের সুখ স্বপনের স্মৃতি।
মুক্তো ঝরা মুচকি হাসির ছোঁয়ায়
মন গগনে উঠতো না তো ঝঞ্ঝা।
তোমার সাথে দেখা না হলে
তোমার সাথে কথা না হলে
ভিন দিশাতে বইত জীবন ধারা
কলঙ্কহীন স্বপ্ন বাঁধন হারা।
হোক না কথা এমনি করেই
কথা হোক না তবে এমনি করেই।
সবাসরি যদি সরে যাও শরমে
সরাসরি যদি মরে যাও মরমে
কথা হোক তবে এমনি করেই।
গোপন কথাটি থাকুক অগোচরে
প্রতিটি রাতের নীরব অভিসারে।
ঘুরপথে আসা ভালোবাসা ইথারে
হোক না বিনিময় এমনি করেই।
আমি ইথারেই খুঁজে নিই তোমাকে
তুমি তো ছবিতেই খোঁজ আমাকে।
কত গোপন প্রেমের না বলা ব্যথা
অতীতের কত স্বপ্ন আদুরে কথা
হোক না বলা এমনি করেই।
কেন মিথ্যে ঝঞ্ঝা রচে মরি,
কেন মিছে দাবানল জ্বেলে পুড়ি ?
আকাশ-মাটির অসম ভালোবাসায়
দেবে না সায় কেউ তো পাগল হাওয়ায়।
প্রেমের পথে নেই যে কথা অলীক
বুকের ভেতর সেই যে ব্যথার ঝিলিক
জানে শুধু আমার ভগ্নহৃদয়
আর তো জানো শুধুই তুমি।
তাই এমনি করেই থাকবো পাশে পাশে
তবে হোক না কথা এমনি ভালোবেসে।
কবি - উজ্জ্বল দত্ত চৌধুরী
বসন্তে আমি নেই
বসন্ত ওই এসেছে আবার,
আবিরে মগ্ন তুমি এই সময়েই,
ভাবি বসে আজ এই বসন্তে
তোমার আবিরে আমার হাত নেই।
শহরের মুখে, বুকে, গায়,
রঙ লাগে পলাশে, কৃষ্ণচূড়ায়,
ব্যথায় কাতর আমি, থাকি আঁধারে,
তুমি থাকো রাঙা হয়ে আবিরে আবিরে।
জানি আসবেনা তুমি কখনও,
তুমি হবেনা আমার কৃষ্ণচূড়া,
মন তবু তোমাকেই চায়,
অপরাধ নয়, এভাবে তোমায় চাওয়া।
ব্যবধান থাকে চাওয়াতে, পাওয়াতে,
তবু যদি আসো ছেড়ে সব পিছুটান,
আলোতে উজ্জ্বল হবে আকাশ বাতাস,
প্রকৃতি উঠবে গেয়ে বাসন্তীক গান।
এই বসন্তে আমি কোত্থাও নেই,
মনেতে শুধু এক প্রত্যাশার ফুল,
পরাজয় মেনে নিতে নিতে, ভাবি
যদি করো কোনদিন নিদারুন ভুল।
রাঙাবো তোমাকে আমি আবিরে আবিরে,
রুদ্ধ হবে মেঘের যাওয়া আসা,
যদি ভুল করে মুখোমুখি হও,
পলাশে শিমূলে মেটাব আকন্ঠ পিপাসা।
তুমি শুনছো? নিছকই কল্পনা শুধু এই,
এ বসন্তে আমি নেই, নেই কোত্থাও নেই।
কবি - সুশান্ত ভট্টাচার্য
এই হায়দরাবাদ শহরে
বিদিশা, এই বসম্তে এসো আমার কাছে
তোমার অপরূপা সৌন্দর্যের উদ্দামতা নিয়ে
আমাকে তোমার উষ্ণ ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে...
সোনাঝরা রোদ্দুরে ভরে আছে চারপাশ
ফুল ফুটছে বসন্তের আমেজ নিয়ে
পাখিরা উড়ছে আকাশে আনন্দে ডানা মেলে...
বিদিশা এসো, ভালোবাসার কবিতা শুনি তোমার কন্ঠে
এসো, দুরন্ত উচ্ছল ভালোবাসার গান নিয়ে
এসো, প্রগাঢ় প্রেমের উদ্দামতা নিয়ে আমার কাছে...
বিদিশা, আমার এই হৃদয় চায় তোমাকে এই বসন্তে
ফুড কোর্টে বসবো পাউভাজি আর কফি নিয়ে
একান্তে তোমার সাথে - এই হায়দরাবাদ শহরে...
কবি - মিতা দাস পুরকায়স্থ
বসন্ত
ফাগুন হাওয়ায় উড়ছে দিগন্তে লাল আগুন
খুশি রঙের আগুন, প্রেমের স্ফুরণ,
একলা প্রজাপতি দুঃখ-সুখে নেচে চলে
মত্ত কোকিলের সুমিষ্ট গানের তালে ।
বসন্ত আজ, এখন বসন্ত, কাল বসন্ত
মোহ-ভালোবাসার সঙ্গসুধায় রঙিন বসন্ত,
মেঘমুক্ত ঝলমলে স্বস্তি রং আকাশে বাতাসে
ঝঞ্জাহীন শুকনো মৃদু হাওয়ায় পলাশে ।
/ভালোবাসা আছে যতদিন হৃদয়ে জোছনা ও গভীর
উল্লাস ততদিন /
কেউ হাত ধরে না যদি বসন্ত ফুরায় সেদিন,
বসন্তের ধূলিতে ওড়ে বেড়ায় সঙ্গসুখের ফুলকি
বাদামি ঝরাপাতার আঁকা নতুন চুমকি ।
বসন্ত আসে শিমুলে, কৃষ্ণচূড়ার লালে
আগুন আগুন চারদিকে রঙে আগুন চলে,
আগুন অন্তরে ,আগুন পোড়ায় নতুন গড়ায়
সঙ্গতৃষ্ণা খোঁজে কর্মসূচিতে বন্ধু ভিড়ায় ।
বসন্ত হাসে নতুন আম্রপল্লবে কচি কুঁড়িতে
হোলি উৎসবে লাল-সবুজ জুড়িতে,
বসন্তের রং লাল তাজা রক্তের মত
বসন্ত মানেই যৌবনগন্ধী উচ্ছ্বাস কত ।
বসন্ত জানে ঘরপোড়া গোরুর অন্তর্জ্বালা
হুহু মাতাল হাওয়ায় লুকানো উদাসী পুষ্পমালা,
নতুনকে বিলানো রং-রূপ-রস চমকায়
ঝরাপত্রের অবাধ সখীসম্মেলন অবহেলায় মচকায়।
বসন্ত মানে গান, কবির কবিতা
অনাসৃষ্টির মাঝে সৃষ্টির গুনগুন সঞ্চিতা।
খুশি
খুশি এলো খুশি এলো
সবার ঘরে ঘরে,
ফাগ ওড়ে লাল সবুজ
রং মন জুড়ে।
ভালো থাকার মন্ত্র পাই
বসন্ত উৎসবে,
প্রকৃতি দেখায় জীবন সত্য
পাতার মোচ্ছবে।
বসন্তের রং প্রেমের মত
লাল রক্তলাল,
বাহারি রং উড়ায় ভালোবাসা
প্রাণদায়ী মশাল।
কবি - স্মৃতি দাস
বেহায়া বসন্ত
দূরত্বের শেষ ভগ্নাংশে দাঁড়িয়ে
হালকা হিমেল হাওয়ার সাথে সুপ্ত বসন্ত
শক্ত চিবুক,ভগ্ন শরীরে কৃষ্ণচূড়ায় নিথর বসন্ত,
উঠোন জুড়ে পায়রার পালক দানা বাঁধে কাঁকড়ার ঠোঁটে।
ঝাঁপসা কাঁচে বন্দি হয় আবছা কুয়াশা
বহুরূপী হয়ে বসন্ত -সুর বাজে উপাসনা গানে।
আকাশ জুড়ে লাল মলাটে ঢাকে বিন্দু বিন্দু বসন্ত সখা,
তলিয়ে যাওয়ার আগে ভ্রমর চোখে দেখে
শেষ আলোর রেশ,আলোর রঙ,স্নিগ্ধ ঝলক!
হলদে,গোলাপি, বেগুনি ছুপে অজস্র রং ধরে
বেহায়া বসন্ত,সমস্ত রং শুষে ডুবজলে দাঁড়িয়ে।
এই বসন্তে
দু চোখের গভীর চাহনি ছুঁয়ে বিবর্ণ হয়ে পড়েছে শ্রান্ত শীত,
ধুসর ক্লান্ত কাঁচের ঘোলাটে দেয়ালে এসেছে যৌবন বসন্ত
ভোর ভোর আঁধার ফুঁড়ে জোনাকিরা পথ-চিহ্নে ছড়িয়ে দেয় অমল সুবাস।
পতংগ উড়ানে গভীর দার্শনিকের মতো লেখে অদৃশ্য বসন্তে সুপ্ত কবিতা।
ঘড়ির কাঁটায় ঘুরে আবর্ত সময়,উড়ায় পলাশ বিলাস
নেশার মতো বসন্ত আবর্তনে,
গানে গানে মাতাল হয় বসন্ত কন্যা।
ভাঁজ করা যে খামটিতে নির্বাসিত হয়েছিল চোরা বসন্ত
আবার আসে সঠিক সময়ের আবাহনী প্রত্যাশায়।
সোনা ঝরা রোদ্দুরে চুমু দিয়ে দেখে একবার বসন্ত
কার উত্তাপ বেশি,পলাশের নাকি কৃষ্ণচূড়ার
নাকি চির পিপাসিত কিছু নির্বাসিত সত্ত্বার...
কবি - পঙ্কজ কান্তি মালাকার
আধুনিক বসন্তরাগ
ফুটপাতে হাঁটা যুবামেরুদন্ড থেকে ছাই উড়ে
- পথের ধূলো বাঁচিয়ে চলা আঁচলেরা দূরত্ব রাখে -
চাঁদ ও সূর্যের তাপে পুড়ে তারা শক্ত লিগামেন্ট বাঁধে
-এই কাঁধেই ভর করে পৃথিবীর চলাচল,
তারা জানে ঘোড়া মানে যোদ্ধা আর বলদের হাল টানতে হয়
হুতাশে হৃদপিন্ড পুড়লেও ভবিষ্যতের আবেদনে উন্নতশির;
বসন্তের পলাশ মাড়িয়ে যায় আনমনে,
মুঠো খুললেই ছাই উড়ে-
এ হাতে কেউ হাত দেয় না, কেউ হাত ধরতে ভয় পায়,
অথচ এই হাতদের ধরেই পৃথিবীতে অনঙ্গোৎসব হবে ;
ভয় পাওয়া চোখ ছাই দেখো,
ভরসা খোঁজা চোখ দেখো আলো -এ যে
পাঁজরের ভিতরে পুড়া সূর্যের বিচিত্র প্রকাশ;
তুমি পলাশের আগুন ফাগে মাতো
-পলাশের আগুন রাগ আসে যাদের হৃদয়োত্তাপে
তাদের কোমল হাতের আবির দিও,তারা শক্ত কাঁধ দেবে।
কবি - শর্মী দে
আজও বসন্ত আসে
বসন্ত আজ বাউলিয়া...
বারুদের গন্ধ চারপাশে, উপজিব্য বলে কিছুই নেই
তবুও সে আসে!
আসে সুরেলা কোয়েলিয়া...
যখন বাতাস ঘোলাটে হতে হতে দমবন্ধ হবার জোগাড়,
সে আসে লুকোচুরি ছলে
অশোকে কিংশুকে!
আসে কোয়েল দোয়েলের সাথে,
উত্থিত যৌবন শাখে।
তার সাথে নিয়ে আসে কিছুটা উড়োচিঠির রঙ
সাথী হয় পিউকাঁহা,
ফাল্গুনী আবির লাজ মেখে।
সে আজ বাউলিয়া, ছন্নছাড়া বসন্তের বিশেষণে
তবুও সে উড়ে আসে!
সাথীহারা প্রেমের অবগাহনে...
পলাশ শিমুল গুচ্ছে অহংকার লুকিয়ে রেখে
আজও সে রাঙা হতে চায়!
তবে সবটুকু আবিরে নয়
কিছুটা ঈশ্বরী তুলিতে!
কিছুটা বাসন্তিকার চুম্বিত উৎসবে...
কবি - সব্যসাচী রুদ্র গুপ্ত
বসন্তে...
বসন্তটা বড়ই প্রিয়!!
বসন্তের সে অনেক রঙ
হলুদ-লাল-সবুজ.......
গভীর,প্রকট,সাদামাটা।
রাখাল ছেলের বাঁশীতেও
শুনি তারুণ্য-
তপ্ত রোদে ঝলসে বাঁশঝাড়।
দেখেছ কেউ প্রথম বসন্ত?
পেয়েছ সেরা বসন্তের আস্বাদন??
আমি দেখেছি বসন্তকে,
জীবনমুখী সৃষ্টির স্বাদে
বড়ই আদুরে অনুভব।
বসন্ত সত্যি খুব কাছের,
আপন ভীষণ,মিশ্রিত আবেশ।
আবার যখন
ফ্যাকাশে হয় বসন্ত;
দৃষ্টি বিকর্ষিত হয়।
ভাইরাসের ব্যাপকতা,
মারণমিছিল,
নির্বাচনী ঘোরপ্যাঁচ,
সভ্যতার গোবরলেজ!
অসমাপ্ত ক্ষোভ আছড়ে পড়ে।
ক্যানভাসটা আর রঙ ছড়ায় না,
ছাড়ায় রঙ।
তবু আছি বসন্তে মিশে,
এক মুঠো ভেজা অরণ্য হাতে নিয়ে।
কবি - জয়া ভাওয়াল
ফাগুন
ভাতের হাড়ি টগবগ
উথলে পড়ে ভাতের ফেন।
তোমার আমার তফাৎ--
এখানেই পাই যেন।
হাড়ির তলায় পরে পরে, সদাই তাপের আগুন খাই।
আমার তাপে করছো বড়াই,
একটি বার ও ভেবেছ ভাই,
করছি আমি কিসের লড়াই?
আমার ফসল খাচ্ছো তুমি--
চাবুক মেরে আমার গায়।
যত বসন্ত তোমার গায়
আমার বসন্ত পাতা পুড়োয়।
পাতায় পাতায় ফাগুন সাজে
আমার বসন্ত শুকনো পাতা কুড়োয়।
তোমার হোলি শূণ্যে ওড়ে
আমার হোলি চরণ তলে।
রঙে রঙে ফাগুন ছড়াও
সম্পৃত্তির বার্তা শোনাও।
আছি যারা তলায় পরে,
তাদের দিকেও ফিরে তাকাও।
তোমার আমার বিভেদ ভাই,
প্রকৃতির তো বিভেদ নাই।
কবি - ধীমান কুড়ি
তকদির
আমি ভালোবাসবো তোমায়।
হয়তো ঘৃণা করো তুমি আমায়।
বছরের পর বছর,
শতাব্দীর পর শতাব্দী।
কিন্তু আমি ভালোবাসবো তোমায়।।
১০০-২০০ বছর পরেও
হয়তো বেরঙিন একটি বইয়ে,
ছেড়া পাতায় আমার কবিতাটি পড়বে পেয়ে ।
হয়তো তখন ভালোবাসবে,
হয়তো তখন আমায় খুঁজবে।।
আমি আপেক্ষা করবো,
শতাব্দীর পর শতাব্দী।
সেই পুরোনো বইয়ের
সেই ছেঁড়া পাতার কবিতার কবি হয়ে।
অপেক্ষা করবো তোমার,
ভালোবাসার প্রেমিক হয়ে।।
তুমি ভালোবাসবে আমায়,
যদি তুমি থাকো আমার তকদিরে।
১০০-২০০ বছর পরে হলেও,
পড়বে আমার কবিতা।
যদি তোমার বিধিতে লেখা থাকে ।।
কবি - গোপাল চক্রবর্তী
বসন্তে
১
দুঃসাহস করতে করতে এই অবেলায় পথিক তোমারে ডেকেছিল,
তুমি দ্বার দিয়ে ঘরে রোদের দিনে কোথায় গিয়েছিলে?
ফিরেছ কখন?
দুর্বল আজ পথের ধুলো,
ওড়ছে দখিনের হাওয়ায় দেশ দেশান্তর পায়ে পায়ে।
অনেকক্ষণ রাস্তা দেখে ফিরে যাব জীর্ণ দেহ।
ফিরিয়ে নিয়ে যাই এক পাহাড় কথার জমাট,
আত্মঅবয়বে তোমার শ্রীমুখ।
মুছে গেছি পায়ে পায়ে গমন চিহ্ন
রেণুর মতো আমি ঊর্মিল হাওয়ায় উড়িয়ে গেছি আকণ্ঠ শব্দকাঙ্খা।
আমি কেঁদেছি ভিতরে ভিতরে,
তোমার নিঃসাড় পথ ভিজেনি অশ্রুতে!
জানতে চেয়োনা কোনদিন, দিনের শেষে যদি ক্লান্ত তুমিও
--তোমার ব্যস্তবাগীশ দিনে কী কথা নিয়ে এসেছিলাম!
চির ঘুমের অবসরে আগুন জ্বালাব আজ গান্ধারে। আজ বসন্ত।
২
“এই বসন্তে মরে যাব আমি”
-এই কথা ভাবতে ভাবতে হেঁটে হেঁটে অনেকটা পথ
ফিরে আসব ঘর।
ভাবতে ভাবতে জ্যোৎস্নার কোলে ঘুমে ঢলে পড়বে অবোঝ শিশু।
এই বসন্তে ফিরে আসবে চলে গেছে যে প্রেমিকা বহুজীবনের
তার হাতে ডুমুরের গুচ্ছ,
অসম্ভবের হাত ধরে এই বসন্তে লিখে যাব পথের শুকনো পাতায় পাতায়
একটি প্রেমের গান
-কোন অন্ধের চোখে খেলে যাওয়া দৃশ্যে তুমি পড়তে পারো কবিতাখানি
শুধু এটুকুই জেনো- আমারও প্রেমিকা ছিল এক
এই কথা ভাবতে ভাবতে
ভাবতে ভাবতে
ভাবতে ভাবতে
ঘুমিয়ে যাব আজ রাতে,
জ্যোৎস্নার কোলে ঘুমে ঢলে পড়বে অবোঝ শিশু।
কবি - দীপান্বিতা ভট্টাচার্য
বসন্তের রং
ঋতুরাজ বসন্ত তোমার আগমনে প্রকৃতি যেন নুতন সাজে সুসজ্জিত;
ঠিক যেমন নববধূর আভূষণে আভূষিত।
রঙে রঙে রং মাখিয়ে রঙিন হয়ে গেছে দিগ্বিদিক।
আবিরের রঙে রাঙিয়ে ও ফাগুনের মাতাল হাওয়ার ছোঁয়ায় মনে প্রাণে লেগেছে রং,
সেই রঙে ডুব দিয়ে সব বেরঙ ধুয়ে গেছে।
আকাশে বাতাসে ফাগুনের রং লেগেছে,
মনের যত মলিনতা আবিরের রঙে গেছে মুছে।
কত কবির কবিতায় তোমার হয়েছে স্থান,
উদাসী প্রেমিকের গলায় বেজে উঠেছে মিলন গান!
তোমার সময়েই তোমার আগমন আবার সময়েই তোমার প্রস্থান।
কিন্তু রেখে যাও হৃদয় ছোঁয়া কিছু বাসনা,
কিছু আবেগ ও কিছু উচ্ছ্বাস...
হয়তো সেই অপেক্ষায় বসে থাকি বারোমাস।।
কবি - রুপালী রায়
বসন্ত
যদিও সেপথে তোমার ভীষণ রদবদল
তবুও আমি একচিত্তে ডুবে আছি
কালের তেপান্তরে ।
বসন্তের আয়োজনে উপেক্ষিতা আমি
কবিদের দলে আমার নামটাই শুধু সার ।
প্রাণে শুধু নিরন্তর অভিলাষ ।
আজ বসন্ত উতলা,
উন্মুক্ত বহুমুখী
ধূলিকণা গায়ে মেখে
বসন্তের উদযাপন ।
কবি - শর্বরী পাল
খেলবো হোলি
শ্রীভূমির ঐ খেলার মাঠে,
দোল খেলবো মিলেমিশে৷
এই চলো যাই নদীর ঘাটে,
চরের বালু মাখবো হেসে৷
শিমুল, পলাশ রক্ত মাখা,
কোকিল কণ্ঠ তানে খাসা৷
আবীর রঙে রঙীন শাখা,
বুকে ফাগুন, মনে আশা৷
নীল-সাদা রঙে ভরা,
স্বপ্ন গুলো মনোহরা৷
পাতা ঝরা কালের পরে,
নতুন কুঁড়ি গাছের ঘরে৷
কিশলয়ের উঁকি দেওয়া,
বিকেল বেলা ঘুরতে যাওয়া৷
খুশীর ছলে আবীর মাখা,
নবীন- প্রবীণ বসন্ত সখা৷
স্পর্শে-স্পর্শে আবীর লাল,
রামধনু আজ নীল গুলাল৷
আমার বসন্ত আগুন আজ,
তোমার ফাগুন এই ঋতুরাজ৷
কবি - রুবেল দাস
বসন্তের আনন্দ
আজ বসন্তের হাওয়ায় প্রেমের গন্ধ বহিছে আকাশে বাতাসে,
কোকিলের কলতানে হায় তারই কথা মনে ভাসে।
এই শুষ্ক দিনে দু'ফোঁটা বৃষ্টির মায়ায় যেমন-
তরু-লতা-বনের কচি সোনালী পাতা গজায়,
ওগো বিধুমুখী!
তোমার নয়নের মায়ায় শুধুই বেঁচে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ পায়।
মনে পড়ে সেই ফাগুনের কথা,
যেদিন সপ্ত-রঙে রাঙিয়ে ছিলে আমায়,
কিন্তু লোহিত রঙের মায়া আজও মনে রয়েছে বিধায়।
ওগো কাঞ্চনা!
তোমার তপ্তকাঞ্চন অঙ্গে আমিও ঢেলেছিলাম পৃথিবীর সকল রঙের বাহার।
পশ্চিমী সূর্যের রক্তিম আভায়,
সকল ভালোবাসা মিশে যেন হয়েছে একাকার।
আবারও এসেছে সেই দিন, লেগেছে প্রেমের গন্ধ,
সকল দ্বার খুলে দাও এ যে প্রেমের আনন্দ।
কবি - সোমালি ভট্টাচার্য ধর
আমার কি দোষ
আমি সতেরো বছরের যুবতী
জন্মের সাত বছর বয়স থেকে
আমি বিধবা,
তাঁতে আমার কি দোষ ?
উৎসবে আমারও মন মাতে-
তারাভরা জ্যোৎস্না রাতে
আমারও গান আসে,
প্রেম আমায়ও ছুঁয়ে যায়
সূর্যাস্তের রক্তিম আকাশে-
তাঁতে আমার কি দোষ ?
আমি রোজ করি কৃষ্ণ জপ
একাদশীর নির্জলা উপবাস
জানিনা উৎসব কাকে বলে ?
কোথায় জন্মায় উল্লাস ।
কাল তোমরা যখন ব্যস্ত ছিলে -
রঙ্গের উৎসবে, রঙ্গের বাহারে
পাশের বাড়ির রঞ্জন আমায় রঙ দিয়েছে
আমার কপালে, আমার গালে,
লাল রঙে নিজেকে দেখেছি প্রথম বারে।
আমি চমকে উঠেছি নিজের রূপে।
কাকিমা খুব মেরেছে,
বলেছে দূর হও বেহায়া মেয়েমানুষ।
আমি রঙ দিইনি কাকিমা,
রঞ্জন দিয়েছে।
তাঁতে আমার কি দোষ ?