সাহিত্য পত্র
গল্প - বসন্তের স্মৃতিচারণ
চান্দ্রেয়ী দেব
২১ মার্চ ২০২২
এই সংখ্যার দ্বিতীয় ছোটগল্প

কী রে ভালো আছিস তারাদের দেশে? আমার কথা মনে পড়ে? জানিস আজ বসন্তের প্রথম দিন। এইদিনে স্টেশনে তোকে প্রথমবার দেখেছিলাম। তোর সেই ধারালো চোখ আর মিষ্টি হাসিটা আমার ভালোলাগার দাগ কেটেছিল । আমি একদৃষ্টিতে তোর দিকে তাকিয়েই থাকতাম। কলেজে গিয়ে দেখি তুই সেই কলেজের ছাত্রী। মনটা আরেকটু বেশি খুশি হল যখন জানতে পারলাম তুই আর আমি সেইম ডিপার্টমেন্টের। সেদিন ছিল ২৭ ফেব্রুয়ারি তোর সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়। তোকে আরও ভালো করে জানতে শুরু করি। তোর খাম খেয়ালী, তোর রাগ, তোর অভিমান, তোর হাসি, তোর কাঁদা এই সব কিছুর আমি প্রেমে পড়েছিলাম। হঠাৎ একদিন তুই ফোন করে বললি একটা জরুরি কথা আছে আমার সাথে। আমি বললাম আমি ও তোকে কিছু বলতে চাই। দেখা হলো গঙ্গার ধারে। আকাশটা মেঘের চাদরে ঢেকে গিয়েছিল। তোর মুখে কেমন যেন বিষন্নতা। চোখটা জলে পরিপূর্ণ ছিল। ভারী গলায় আমাকে বললি আমার আর বেশিদিন নেই রে শুভ। তখন ও আমি বুঝতে পারলাম না আমার জীবনটাও কালো মেঘে ঢাকা পড়তে চলেছে। আমি বোকার মতো জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে পত্রলেখা। তুই বললি "ক্যান্সার"। এই একটা শব্দ আমার জীবনটাকে তছনছ করে দিল। তোকে আর আমার ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করা হলো না। মনে হাজার কষ্ট, দুঃখ হলেও মুখে হাসি নিয়ে তোকে বললাম ধুর পাগলি এই রোগটা হলেই মানুষ মরে যাই। তুই যে কি বলিস না। তুই বাঁচবি বুঝেছিস।আমি আছি সবসময় তোর পাশে। একবছর হয়ে গেল। পত্রলেখা লড়াই করছে ওর জীবনের সাথে আর আমি লড়াই করছি আমার মনের সাথে। সেদিন ও ছিল বসন্তকাল। বেলা এগারোটা আমাকে ফোন করে বললি চল না শুভ গঙ্গার ধারে। বুকটা কেমন করছে। কিছুই ভালো লাগছে না। আমি বললাম ঠিক আছে আমি তোকে বাড়ি থেকে নিয়ে আসব। তুই একা একা আসবি না। দুজনে গিয়ে বসলাম গঙ্গার ধারে। তুই আমার দিকে তাকিয়ে আছিস। আমি বললাম কী রে কী হলো.....। তুই বললি আমি চলে গেলে আমাকে ভুলে যাস না। আমি বললাম তোকে ভুলবো এই কথাটা ভাবলি কী করে আর তুই কোথায় যাবি... তুই আমার সঙ্গে থাকবি সবসময়। পত্রলেখা চুপ করে বসে রইল। হঠাৎ ভালোবাসা এমন ই হয় তাই না রে শুভ। এই কথা বলে ওর মাথাটা আমার কাঁধে ফেলে চিরকালের জন্য ঘুমিয়ে গেল।
"বসন্তে আমাদের প্রথম দেখা এবং বসন্তেই আমাদের শেষ দেখা। ঠিক বলেছিলিস রে পত্রলেখা ভালোবাসা এমন ই হয়। তোর শুভ তোকে আজীবন এমন ই ভালোবাসবে। ভালো থাকিস "পত্রলেখা"