হাল্কাচ্ছলে - ১
অম্ল মধুর : দয়া কর মা দশভুজা
কল্যাণ দেশমুখ্য
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও লেখক, শিলচর

বরাক উপত্যকার গীত ও ধামাইল রচয়িতা আরতি প্রভা ভট্টাচার্য লিখেছেন--
' গিরিকে দেখিয়া উমা করেন ক্রন্দন
এক বৎসর গত অইল কিসের কারণ ?
গিরিরাজ বলিলেন , প্রাণের কুমারী
গত বৎসরে নাইওরেতে দেননি তিপুরারী।
শিবের চরণ ধরে বলে দয়াময়ী
এই বৎসরে নাইওরেতে দাও কৃপা করি।
মহাদেব বলিলেন , মহেশ মোহিনী
আমার গৃহ শূণ্য করি কেমনে যাও তুমি ?
উমা বলিলেন , ষষ্ঠী দিনে যাইমু আমি
থাকমু বেল গাছের তলে ।
সপ্তমীতে উঠমু আমি মন্ডপে মন্ডপে
অষ্টমী , নবমী দুইদিন থাকমু মহানন্দে।
দশমীর বৈকালেতে আইমু কৈলাশে
এই কথা শুনিয়া শিবের দয়া অইল মনে
আদেশ করিলেন কার্তিক , গনেশ আর লক্ষ্মী , সরস্বতীরে
নিয়া যাও মা রে তোমরা পিতৃপুরে ' ।
জগজ্জননী মা আসছেন। সিংহবাহিনী, অসুরনাশিনী দেবী দুর্গা আসছেন ভুবন আলো করে। তাঁর একপাশে আছেন ধনের দেবী লক্ষ্মী। অন্যপাশে আছেন জ্ঞান তথা সঙ্গীতের দেবী সরস্বতী। এপাশে আছেন চেম্বার অব কমার্স গনেশ ঠাকুর। ওপাশে আছেন বীর সেনাপতি কার্তিক। সেসঙ্গে আছে দেবীর বাহন পশুরাজ সিংহ।আর আছে মহিষাসুর।
শোনা গেছে, গতকাল সকালবেলা মা দুর্গা হুমকি দিয়ে বলেছেন , বোনাসের টাকার কি হলো ? টাকাগুলো আমাকে দাও।
বৌর হুমকি শুনে বাবা মহাদেবের নেশা গেল ছুটে। ঢুলুঢুলু চোখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন , বোনাস ? সেটা আবার কি ?
দুর্গা দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বললেন, নেশা করে করে কি তোমার বুদ্ধিশুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে ? এই যে সমস্ত কৈলাশ জুড়ে অজস্র কর্মচারী দিনরাত আমাদের সেবা যত্ন করে যাচ্ছে , পুজোর আগে তারা কি কিছু কেনাকাটা করবে না ? তাদের কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে?
বাবা শিব এবার মুখ বেঁকিয়ে হেসে বললেন , চাইলেই কি দিতে হবে ? রাজ্যের বেসরকারি কর্মচারীরাও তো চেয়েছিল। কিন্তু পেয়েছে কি ?
দুর্গা রেগে গিয়ে বললেন , তুমি কি রাজ্য সরকারের মতো নাকি ? তোমরা নিজেদের মাইনে বাড়িয়ে নিয়েছ। আর বাকি কর্মচারীদের হাতে কি কাঁচকলা ধরাবে ? সবাই তো আমাদের সন্তান। ওদের মনে কষ্ট দিলে আমাদের অকল্যাণ হবে।
শিব ঠাকুর বললেন , দেখি স্বর্গের ট্রেজারি অফিসার মানে কুবেরের সঙ্গে কথা বলে। আর আমাদের ঘরে ও তো দু - দুজন রোজগারি ছেলে রয়েছে। তারপরে ও কেন তুমি আমার কাছে টাকা চাও ? যাও , এখন আর আমাকে বিরক্ত কর না।
শিব ঠাকুরের কথা শুনে মা দুর্গা রাগে গজগজ করতে শুরু করলেন। তিনি বললেন , আমার হয়েছে যত জ্বালা। কোন ও সন্তানকেই আমি ফেলে দিতে পারিনা। এসব কথা বলতে বলতে রাগে বিড়বিড় করে তিনি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।
দুর্গা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই শিব ঠাকুর লম্বা হাঁক মেরে বললেন , এই এই নন্দীর বাচ্চা , আমার মোবাইলটা নিয়ে আয় তো ? দেখব আমায় পেনসনের টাকা একাউন্টে ঢুকল কি না। যদি ঢুকে তাহলে ভালো কোয়ালিটির গাঁজা আর আফিঙ নিয়ে আসবি।
এদিকে দুর্গা ঘর থেকে বেরিয়ে প্রথমে গেলেন তাঁর ছোট পুত্র গনেশের ঘরে। গনেশ তখন গোটা পঁচিশ লুচি আর এক বাটি হালুয়া নিয়ে প্রাতরাশ করছিলেন।
মাকে দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন , কি ব্যাপার মা ? এত সকাল সকাল আমার এখানে ?
শাশুড়িকে ঘরে ঢুকতে দেখে গনেশের দুই বৌ ঋদ্ধি আর সিদ্ধি দরজার আড়ালে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলেন। মা আর ছেলের কথা তারা উভয়ে মন দিয়ে শুনছেন।
দুর্গা বললেন , জানিস গনু , এটা হলো পুজোর মাস। সবাইকে বোনাস টোনাস দিতে হবে। তুই কি কিছু টাকা আমাকে ধার দিতে পারবি? তোর বাবাকে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি তো দুই হাত উপরে তুলে দিয়েছেন।
গনেশ বললেন , বাবা যেন দিনদিন হাড়কিপ্টে হয়ে যাচ্ছেন। আর তুমি তো জানো মা , গত বৈশাখ মাসে আমি মর্ত্যলোক থেকে ঘুরে এসেছি। এতে আমার অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। আর ডিমনিটাইজেশন ও জি এস টির জন্য ব্যবসার হাল খুব খারাপ। আমি যা ইনভেস্টমেন্ট করেছিলাম , সবকিছুই লসে চলছে। তাছাড়া , ঘরে আমার দুটো বৌ আছে। এদের ও মন জুগিয়ে চলার দায়িত্ব আমার।
হঠাৎ গনেশের মোবাইলে টুং করে একটা আওয়াজ হলো। গনেশ মোবাইল অন করে দেখলেন , তার বৌ ঋদ্ধি এস এম এস করেছে। সে লিখেছে , মা সবসময় তোমার কাছে টাকা চায় কেন ? ছোট ঠাকুরপো তো চিরকুমার। তার উপর সে মিলিটারি জেনারেল। মাকে বলো , ছোট ঠাকুরপোর কাছে টাকা চাইতে। তুমি টাকা দেবার প্রতিশ্রুত দিওনা।
এই কথাগুলো পড়ে গনেশ বললেন , মা আমি চেষ্টা করব। দেখি তোমাকে কিছু টাকা ধার দেওয়া যায় কিনা। একসপ্তাহ পরে তোমাকে আমি জানাব। তাছাড়া , তুমি তো তোমার ছোট পুত্রের কাছে টাকা চাইতে পারো।
বিফল মনোরথ হয়ে দুর্গা বেরিয়ে গেলেন গনেশের ঘর থেকে। এরপর তিনি গেলেন তাঁর বড় পুত্র কাতুর ঘরে। কার্তিক তখন মিলিটারি কায়দায় চেয়ারে বসে তার বাহন ময়ূরকে আদর করছিলেন। মাকে দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন , এত সকালে আমার ঘরে ? কি ব্যাপার?
দুর্গা বললেন , তুই তো জানিস এখন পুজোর মাস। এই সময়ে আমাদের কর্মচারীদের কিছু টাকা পয়সা দিতে হবে। ওরা নতুন কাপড় চোপড় কিনবে। তুই আমাকে কিছু টাকা ধার দে কাতু। কার্তিক বললেন , তুমি তো জানো মা , বিশ্বের সীমান্ত গুলোতে অনবরত গোলাগুলি চলছে। এই সময়ে বিদেশি রাষ্ট্র থেকে আমাদের গোলা বারুদ ও হাতিয়ার কিনতে হবে। তাই তোমাকে এখন টাকা দিতে পারব না। তবে যদি সম্ভব হয় তবে কিছু টাকা সাহায্য করার চেষ্টা করব।
এরপর মা দুর্গা বেরিয়ে গেলেন কার্তিকের ঘর থেকে। পথে হঠাৎ দেখা হয়ে গেল তার বিবাহিতা দুই কন্যার সঙ্গে। দুর্গার মুখ থেকে সবকিছু শুনে দুই বোন বলল , আমরা তোমাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করব। টাকা আমাদের ফেরৎ দিতে হবে না।
লক্ষ্মী ও সরস্বতীর কথা শুনে দুর্গা খুব খুশি হলেন। তিনি বললেন , তোমরা আমার বিবাহিতা কন্যা। তোমাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া অন্যায় ও লজ্জার বিষয়। আমি তোমাদের কাছ থেকে টাকা নিতে পারব না। এই বলে তিনি সামনের দিকে পা বাড়ালেন। হঠাৎ দুর্গার মোবাইলে টুং করে একটা শব্দ হলো। দুর্গা মেসেজ খুলে দেখেন , তাঁর একাউন্টে কয়েক কোটি টাকা এসে ঢুকছে। তিনি বিস্মিত হলেন।একটু পরে আর ও একটা ম্যাসেজ এলো।
দুর্গা ম্যাসেজ পড়ে দেখলেন , আমাদের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও মনের সম্পর্ক আছে। আর কে না জানে , মনের সম্পর্ক হলো আসল সম্পর্ক। তাই আমি আপনার একাউন্টে দুই হাজার কোটি টাকা পাঠালাম।
ইতি
মহিষাসুর