মাঠে ময়দানে
বদরপুরে হকি : এক নতুন অভিজ্ঞতা
তাজ উদ্দিন, ক্রীড়া সাংবাদিক
০৩ জানুয়ারী ২০২১
খেলা বলতে ক্রিকেট। স্রেফ ক্রিকেট। ক্রিকেটের দাপটে আমাদের বরাক উপত্যকায় অন্য খেলাধুলা কল্কে পায় না। এক সময় ফুটবল বেশ জনপ্রিয় ছিল। দর্শকদের কাছে আজও ফুটবল সমান জনপ্রিয় রয়েছে। কিন্তু খেলোয়াড়ের অভাব। ব্যক্তিগত ইভেন্ট কখনোই জনপ্রিয় ছিল না। ডি এস এ-গুলিতে কালেভাদ্রে কিছু ছোটখাটো ইভেন্টের আয়োজন হয়। ইদানীং ব্যাডমিন্টন অবশ্য বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। টিম গেমে ভলিবলের কিছুটা চর্চা রয়েছে। কিন্তু হকি? মিটমিট করে জ্বলছে শুধু শিলচর আর হাইলাকান্দি ডি এস এ-তে। করিমগঞ্জের কেউই কোনও প্রতিযোগিতায় হকি স্টিক ধরেননি। এই পরিস্থিতিতে বদরপুর প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে সীমান্ত জেলায় প্রথম হকি প্রতিযোগিতা আয়োজন অবশ্যই একটা ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
হকিতে ভারতের বিশ্বজোড়া খ্যাতি। ১৯২৮ সাল থেকে টানা ছয়বার তারা অলিম্পিক গেমসে হকির স্বর্ণপদক জিতেছে। সব মিলিয়ে আটটি সোনা, একটি রুপো এবং তিনটি ব্রোঞ্জ জিতেছে। এরপরও ভারতের সব জায়গায় হকির চর্চা হয় না। যে তালিকায় এতদিন সীমান্তবর্তী করিমগঞ্জ জেলার নামও ছিল। ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর দিনটি ইতিহাস হয়ে গেল। বদরপুর প্রেস ক্লাবের আয়োজিত মহম্মদ আলি মেমোরিয়াল শিল্ড (Mohammad Ali Memorial Shield) ও ফজলুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রফি ( Fazlur Rahman Memorial Trophy) হকি প্রতিযোগিতায় অংশ নিল এমাদ উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন করিমগঞ্জ দল (Karimganj Hockey Team)। চার দলীয় আসরে তারা অবশ্য শিলচর ডি এস এ-র দলের কাছে ৩-১ গোলে হেরে যায়। করিমগঞ্জের হয়ে মাহদুদ হুসেন (Mahdud Hussain) এদিন দলের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন। ওই প্রতিযোগিতায় হাইলাকান্দি ডি এস এ এবং বদরপুর প্রেস ক্লাবের নিজস্ব একটি দলও অংশগ্রহণ করে।
রেলশহর বদরপুরের আল ইসলাহ ন্যাশনাল অ্যাকাডেমির মাঠে নকআউট ওই আসরে বদরপুর প্রেস ক্লাবের দলটি ৪-০ গোলে হেরে যায় হাইলাকান্দি ডি এস এ-র কাছে। হাইলাকান্দি দলটি আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়। ফাইনাল ম্যাচে তারা শিলচরকে ৪-২ গোলে হারিয়ে শিল্ড নিয়ে ফিরল। আসরের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে শিলচরের সুরজিত দেব পেয়েছেন অমিত শুক্লবৈদ্য স্মৃতি ট্রফি। ফাইনালে দুই গোল করে হাইলাকান্দির সিনথৈবা সিং ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে নেন। তাঁকে দেওয়া হয় আব্দুর রাজ্জাক মেমোরিয়াল ট্রফি। প্রসঙ্গত, ১৯ ডিসেম্বর একটি প্রদর্শনী ম্যাচ দিয়ে শুরু হয় দুই দিনের হকি টুর্নামেন্ট। আসাম হকি সংস্থার সহসভাপতি তথা শিলচর ডি এস এ-র হকি সচিব বিকাশ ভট্টাচার্য এর উদ্বোধন করেন।
ফাইনাল ম্যাচে উপস্থিত থেকে করিমগঞ্জ ডি এস এ-র সভাপতি অমলেশ চৌধুরী (Amalesh Choudhury ( ও সচিব সুদীপ চক্রবর্তী (Sudip Chakrabarty) জেলায় হকির সূচনার জন্য প্রেস ক্লাবের ভুয়সী প্রশংসা করেন। শিলচর ডি এস এ-র সহসচিব যাদব পাল (Yadob Paul), গ্রাউন্ডস সচিব নিলয় পাল, ইন্ডোর হকিতে জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করা হাইলাকান্দির খেলোয়াড় শ্যামল সিংহ, আল ইসলাহ অ্যাকাডেমির সচিব মহম্মদ শাহজাহান প্রমুখ প্রেস ক্লাবের উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। ডি এস এ-র সচিব সুদীপ চক্রবর্তী জানান, ২০২১ মরশুম থেকে করিমগঞ্জ ডি এস এ-ও হকি প্রতিযোগিতা চালু করার উদ্যোগ নেবে।
করিমগঞ্জ দলে যারা খেলেছেন -- এমাদ উদ্দিন (অধিনায়ক), মবরুর আলম, পারভেজ আলম, শিবম দেব, আহমদ রুহুল আলম, মাহদুদ হুসেন, সাহাল হুসেন, মিফতাউল আলম, শাহিন আহমদ, নাবিদুল ইসলাম এবং সালেহ আহমদ।
বদরপুর প্রেস ক্লাব ( Badarpur Press Club) দলে ছিলেন : সহিরুল ইসলাম বকুল (Sahirul Islam Bokul), পিন্টু শুক্লবৈদ্য (Pintu Suklabaidya), মহম্মদ সেলিম আহমদ (Salim Ahmed), দেবপ্রিয় দেব ( Debopriyo Deb), শরিফ উদ্দিন, মহম্মদ তাজ উদ্দিন (Md Taz Uddin), জুবাইর আহমদ, শাকির আহমদ, জাহির উদ্দিন, আলি হুসেন, মুরাদ রব্বানি, দিলশান আহমদ। যীশু নাথ এই দলের ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন।
খেলা আয়োজন বা খেলার এসব শুকনো রিপোর্টিংয়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব রাখে খেলার পরিবেশ তৈরি করা। সেটাই করার চেষ্টা চালিয়েছে বদরপুর প্রেস ক্লাব। লকডাউন এবং এর পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় আল ইসলাহ মাঠটি অব্যবহৃত অবস্থায় ছিল। লম্বা লম্বা ঘাস গজিয়ে উঠেছিল সেখানে। আল ইসলাহ কর্তৃপক্ষকে এই খেলা আয়োজনের ব্যাপারে প্রথমে রাজি করানো হয়। এরপর করিমগঞ্জ দল গঠনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। মাঠ পরিষ্কার করে নতুন উদ্যোমে নতুন একটা খেলার প্রস্তুতি শুরু হল। শিলচর থেকে কিনে নেওয়া হল হকি স্টিক। আরও কয়েকটা আনা হল অনলাইনে। এমাদ উদ্দিনের উদ্যোগে জার্সি, মোজা, শিনগার্ড কেনা হল। ইউটিউবে ভিডিও দেখে শুরু হল প্র্যাকটিস। মোঃ শাহজাহান, সহিরুল ইসলাম বকুল এবং আমি যতটা সম্ভব সময় দিলাম। ১৯ ডিসেম্বর হকি কোচ সঞ্জিত পাণ্ডে এবং আসাম হকি সংস্থার সহসভাপতি বিকাশ ভট্টাচার্য বদরপুর এলেন। সঙ্গে শিলচর ডি এস এ-র মাঠ বিশেষজ্ঞ রাম বেহরাও ছিলেন। নির্দিষ্ট মাপমতো তৈরি হল খেলার মাঠ। এরপর এক ঘন্টা চলল সঞ্জিত পাণ্ডের কোচিং। দুটি দল মাঠে নামার জন্য তৈরি হয়ে গেল। এভাবেই ১৯ ডিসেম্বর প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে পরের দিন প্রতিযোগিতায় নামার প্রস্তুতি সেরে ফেলল বদরপুর প্রেসক্লাব এবং করিমগঞ্জ।

