মাঠে ময়দানে
খুদে খেলোয়াড়দের ধরে রাখতে হবে
ইকবাল বাহার লস্কর
২০ জানুয়ারী ২০২১
শিশুদের কলকাকলি কার না ভাল লাগে? রবিবার সাতসকালে শিলচর স্পোর্টিং ক্লাব ময়দানে কচি কচি ফুটবলারদের খেলা দেখে মন ভরে গেল। শিলচরের মাটিতে এই প্রথম আয়োজিত বেবি লিগ ফুটবল আসর দেখে একটা কথা বলা যায় যে আগামীতে এরকম প্রতিযোগিতা আরও অনেক হবে। আর যদি কচি কচি শিশুরা ফুটবল পায়ে মাঠে নেমে পড়ে তাহলে তারা নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতের বড় ফুটবলার হতে পারবে।
শিশুরা খুব তাড়াতাড়ি শিখে নিতে পারে। সেটা পড়াশোনা হোক কিংবা খেলাধুলা। যদি তারা আগ্রহ পেয়ে যায় তাহলে সেই খেলাকে মনেপ্রাণে ভালবাসতে পারবে। আমড়াঘাট এলাকার কৃষ্ণপুর ভিক্টরি ক্লাবের খুদে ফুটবলাররা একটা জিনিস দেখিয়ে দিল যে বরাক উপত্যকার গ্রামে এখনও ফুটবল জনপ্রিয়তায় এক নম্বর খেলা। এই খেলাটিতে সহজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা যায়। কিন্তু বড় প্লাটফর্মে যাওয়ার সুযোগ না পাওয়ায় অনেকেই হারিয়ে যায়। তাই রবিবার শিলচর স্পোর্টিং ক্লাব ময়দানে ফুটবল অ্যাকাডেমি আয়োজিত বেবি লিগে অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের ভবিষ্যতের জন্য সুন্দর রাস্তা দেখিয়ে দিতে হবে। তাহলে তারাও জেলা এবং রাজ্য স্তরের জন্য নিজেদের তৈরী করতে পারবে।
বেবি ফুটবল লিগের নিয়মিত আয়োজন থাকলেই ভবিষ্যতের জন্য ফুটবলার নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বদরপুরে চিলড্রেন স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত প্রথম বরাক বেবি লিগ ফুটবল আসরে আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম। তখন দেখেছি, খুদে ফুটবলাররা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে খেলছে। বদরপুর ছাড়াও মালুয়া, আলেখারগোল, শ্রীগৌরী অঞ্চলের মোট ছয়টি দল লিগ ফরম্যাটে দুই দিনের আসরে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে তাদের জন্য ভাল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়নি। তাই, সেই খেলোয়াড়দের মধ্য থেকে কতজন ভবিষ্যতে ফুটবল খেলবে সেটা বলা মুশকিল। তাই, শিলচর ফুটবল অ্যাকাডেমির কাজ হবে উঠতি খুদে ফুটবলাররা যাতে আগামীতেও যাতে নিয়মিত খেলতে পারে সেই ব্যাপারে একটু দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। কাজটা যে একেবারে সহজ নয়, সেটা বলাই বাহুল্য।
উল্লেখ্য, শিলচরের টাউন ক্লাব তাঁদের বার্ষিক ক্রীড়ায় বিভিন্ন বয়স গ্রুপে প্রতিযোগিতা আয়োজন করে থাকে। চলতি বছর তারা শিশুদের খেলাধুলার পাশাপাশি ১০ থেকে ১২ বছর, ১৩ থেকে ১৬ বছর--- এই দুটি বয়স গ্রুপেও বিভিন্ন ধরনের ইভেন্ট করিয়েছে। এর চেয়ে বেশি বয়সীরা ওপেন গ্রুপে খেলেছেন। আর, বয়স গ্রুপে সফল হওয়া খেলোয়াড়রা কখনো কখনো সিনিয়রদের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। এভাবে লড়াইয়ের জন্য ভাল প্লাটফর্ম দিয়ে থাকে টাউন ক্লাবের আসর। সিনিয়র পুরুষ বিভাগে ২০২১ সালে সেরা অ্যাথলিটের সম্মান পেয়েছেন জিতেন্দ্র সিং। সেরা মহিলা অ্যাথলিট সালু বেগম তালুকদার। সাব জুনিয়র অর্থাৎ ১০-১২ বছরের গ্রুপে সেরা হয়েছেন ধলছড়ার সরবজিৎ কর্মকার। মেয়েদের মধ্যে সেরা জালালপুর বাগানের লক্ষ্মী মুণ্ডা। জুনিয়র বিভাগে ১৩-১৬ গ্রুপে সেরা ছেলে আদিত্য সিং। মেয়েদের মধ্যে প্রিয়া সিনহা সেরার মুকুট পেয়েছে। প্রত্যেকের ব্যক্তিগত জীবনে এসব কিছু তো অবশ্যই অনেক গুরুত্ব রাখে।
খুদেরা একটা জিনিস খুব ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারে। সেটা হল, বড় কোন আসরে জিততে হলে তোমাকে ভাল পারফর্মেন্স করতেই হবে। এসব দেখাদেখি ছোটরাও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মনোভাব পেয়ে যায়। আগামীতে তারা বড়দের লেভেলে প্রতিযোগিতা করবে সেটা তাদের মাথায় ঢুকে যায়। তাই টাউন ক্লাবের শিশু ক্রীড়ার একটা বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। অন্য সংগঠনগুলিও যদি এভাবে শিশুদের খেলাধুলাকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে উৎসাহিত করে, তাহলে আমাদের জন্য ভাল অ্যাথলিট পাওয়া মোটেও কঠিন হবে না। খেলাধুলাকে আজকাল কেরিয়ার হিসেবে নেওয়ার প্রচুর সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। আপনি যদি বড় অ্যাথলিট হতে পারেন, তাহলে শিক্ষাগত যোগ্যতা অনেক ক্ষেত্রে গৌণ হয়ে পড়ে। খেলোয়াড়রাই তো স্টার, মেগাস্টার, সুপারস্টার। তাদের হাজারে হাজার ফ্যান ফলোয়ার। তাই সবাইকে শিশুক্রীড়ার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে এগিয়ে আসার সময় হয়ে গেছে।




